"বরুড়া থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লুলেস পপি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন; মূলহোতাসহ ২ জন গ্রেফতার"
গত ১৩/১২/২০২৩ইং তারিখ বাদী মোঃ আলী হোসেন(৪৫), পিতা-মোঃ আইয়ুব আলী, মাতা- আরফানুর নেছা, সাং-সোনাইমুড়ী (মইশ পুকুরিয়া হাজী বাড়ী), থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লা এর মেয়ে ভিকটিম পপি আক্তার(১৭) বরুড়া থানাধীন সোনাইমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় হতে পরীক্ষা দিয়ে দুপুর অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় বাড়িতে আসে। বাদীর মেয়ে বাড়িতে আসিয়া দুপুর অনুমান ১৩.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম পপি আক্তার(১৭) ছাগল চরাইতে বাদীর বাড়ির অনুমান আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে চান মিয়ার জমিতে যায়। কিন্তু বাদীর স্ত্রী বাজার হইতে বাড়িতে আসিয়া বাদীর মেয়ে পপি আক্তার(১৭)কে না পাইয়া বাদীর স্ত্রী খোরশেদা বেগম ও তাহার শ্বশুর শমসের আলী(৮০) বাদীর বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজি করাকালে ঘটনাস্থল বরুড়া থানাধীন ১৩নং আদ্রা ইউপির সোনাইমুড়ী সাকিনের চান মিয়ার জমি সংলগ্ন খালের পানিতে বাদীর মেয়ের জামার কিছু অংশ ভাসতে দেখিয়া শোর চিৎকার দেয়। তখন বাদীর স্ত্রীর শোর চিৎকার শুনিয়া ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী ধান ক্ষেতে কৃষি কাজ করা অবস্থায় মোঃ কাশেম হোসেন(৪০), পিতা- মৃত মনু মিয়া, মাতা-জয়দুরনেছা, সাং-মইশ পুকুরিয়া, থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লা দৌড়ে আসিয়া বাদীর শ্বশুর শমসের আলী(৮০) সহ খালের পানিতে নামিয়া বাদীর মেয়ে পপি আক্তার(১৭)কে গত ১৩/১২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ বিকাল ০৫.৩০ ঘটিকায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে বাদী সৌদি প্রবাস হইতে ১৪/১২/২০২৩খ্রিঃ বাড়িতে আসিয়া তাহার স্ত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে বিস্তারিত শুনিয়া ময়না তদন্ত শেষে বাদীর মেয়ের লাশ বুঝিয়া নিয়া দাফন সম্পন্ন করেন এবং থানায় আসিয়া এজাহার দায়ের করিলে বরুড়া থানার মামলা নং-০৮, তাং-১৫/১২/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলার তদন্তভার এসআই(নিঃ)/ নাজিম উদ্দিন এর উপর অর্পন করা হয়।
ভিকটিম পপি আক্তার(১৭) এর লাশ পাওয়ার পর হইতে পুলিশ সুপার কুমিল্লা মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এ,কে,এম এমরানুল হক মারুফ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, সদর দক্ষিণ সার্কেল, কুমিল্লার তত্বাবধানে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী, পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মীর রেজাউল ইসলাম, এসআই(নিঃ)/ নাজিম উদ্দিন সহ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় বরুড়া থানা পুলিশের একটি চৌকস টীম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। নিহতের পরিবার ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে হত্যাকান্ডের কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের জন্য বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জসহ টীম বরুড়া বারবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্ত কার্যক্রমের একপর্যায়ে হত্যাকান্ডে ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭), পিতা- মিজানুর রহমান, মাতা- ফাতেমা বেগম, সাং- মহিষ পুকুরিয়া, সোনাইমুড়ি, থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লা সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। নিশ্চিত হওয়ার পর ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) গ্রেফতার করেন। ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭)কে গ্রেফতার করার পর তাহার ভাষ্য মতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকা অপর আসামী ২। কাশেম হোসেন(৪৪), পিতা- মৃত মনু মিয়া, মাতা- জয়দুরের নেছা, সাং- মহিষ পুকুরিয়া, সোনাইমুড়ি, থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লাকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতার করিয়া জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় এক পর্যায়ে হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। আসামী ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) জানায় তিনি পেশায় একজন বাসের চালক ও মাদকদ্রব্য গাঁজা সেবন করে এবং আসামী ২। কাশেম হোসেন(৪৪) পেশায় একজন সিএনজি চালক ও পাশাপাশি কৃষি কাজও করে। গত ১৩/১২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ আসামী ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) বেলা অনুমান ১৪.১৫ ঘটিকার সময় বরুড়া থানাধীন সোনাইমুড়ি গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌছে খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পূর্ব হইতে জমিতে ধান কাটারত আসামী ২। কাশেম হোসেন(৪৪) এর সহিত কথাবার্তা বলে। উক্ত জমির পাশ^বর্তী জমিতে ভিকটিম পপি আক্তার(১৭)কে ছাগল চরাইতে দেখতে পায় এবং আশেপাশে কোন লোকজন দেখতে না পাইয়া তাহাদের মনে কু-চিন্তার উদয় হয়। তারই ফলশ্রুতিতে আসামীদ্বয় ভিকটিম পপি আক্তার(১৭)কে ধর্ষন করার চিন্তা ভাবনা করে। সে মোতাবেক আসামী ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) ভিকটিম পপি আক্তার(১৭)কে কু-প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম উক্ত প্রস্তাবে রাজি না হইলে আসামী ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) ভিকটিমের হাত ধরে টানা হেঁচড়া করে। পরে ভিকটিমকে আসামী ফারুক হোসেন শামীম(২৭) অপর আসামী আবুল কাশেম(৪৪) এর সহায়তায় মাটিতে ফেলে ধর্ষনের চেষ্টা করে। কিন্তু ভিকটিম পপি আক্তার(১৭) কোন রকমে ছুটে দৌড়ে ঘটনাস্থলের কলা গাছের গোঁড়ায় যেতেই পুনরায় আসামী ১। ফারুক হোসেন শামীম(২৭) ভিকটিমকে ধরে মাটিতে শুইয়ে ধর্ষনের চেষ্টা করিলে অপর আসামী কাশেম হোসেন(৪৪) ভিকটিমের দুই পা দুই হাতে ধরে রাখে এবং আসামী ফারুক হোসেন শামীম(২৭) ভিকটিমের বুকের উপর বসে প্রথমে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে। তখনও ভিকটিম ধস্তাধস্তি করে এবং শোর চিৎকার দিতে চেষ্টা করে। আসামী ফারুক হোসেন শামীম(২৭) কোন উপায় না দেখে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে এবং হাতের কাছে একটি বাঁশের টুকরা পেয়ে ঐ বাঁশের টুকরা দিয়ে ভিকটিমের কন্ঠনালীর উপর চেপে ধরে রাখে। প্রায় ১/২ মিনিট চেপে ধরে রাখার পর ভিকটিমের কোন নড়াচড়া না করায় এবং মৃত্যু বরণ করায় আসামীদ্বয় লাশ গোপনের উদ্দেশ্যে পাশর্^বর্তী খালের পানির নিচে কাঁদার মধ্যে চেপে রেখে আসামী ফারুক হোসেন শামীম(২৭) গাড়ি চালাতে চলে যায় এবং কাশেম হোসেন(৪৪) তার কৃষি জমিতে ধান কাটতে চলে যায়। আসামীদ্বয় সহ ঘটনাস্থলে হাজির হইয়া গেলে আসামীদ্বয় ঘটনার বিস্তারিত বলে এবং হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত বাঁশের টুকরাটি পাশের জঙ্গলের ভিতর থেকে আসামী ফারুক হোসেন শামীম(২৭) এর দেখানো মতে উদ্ধার পূর্বক এসআই(নিঃ)/ নাজিম উদ্দিন জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে যথাযথ পুলিশ পাহারায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।